একটা সময় ঘরের অন্যতম ক্লান্তিকর কাজ ছিলো কাপড় ধোয়া। আর এখন কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে সময় বাঁচাতে চলে এসেছে ওয়াশিং মেশিন। ওয়াশিং মেশিন এখনকার গৃহিনীদের অন্যতম পছন্দের ডিভাইস। চলুন তবে আজকের পিকাবু ব্লগে নতুন ব্যবহারকারীদের সাথে জেনে নিই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সম্পূর্ণ স্টেপ এবং সম্পর্কিত অন্যান্য আরও বিষয়।
১. কাপড় রেডি করুন
শুরুতে আপনি যেসব কাপড় পরিষ্কার করতে চান তা একসাথে করুন। মনে রাখবেন ওয়াশিং মেশিনের কিন্তু ধারণক্ষমতা রয়েছে। এই ধারণক্ষমতার বাইরে কাপড় দিলে মেশিন ঠিকমতো কাজ করবে না।
অনেক সময় এতে মেশিন নষ্ট হয়ে যাবারও সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার নিয়ম হিসাবে শুরুতেই ধারণক্ষমতা অনুসারে কাপড় সংগ্রহ করে নিন।
কাপড় রেডি করার সময় অবশ্যই শার্টের বোতাম খুলে নিবেন, প্যান্টের বা ড্রেসের যেকোনো ধরণের জিপার বন্ধ করুন, পকেট চেক করুন। নতুবা বোতামসহ জিপার কিংবা বিভিন্ন ফেইক স্টোনের ডিজাইন ধোঁয়ার সময় মেশিনের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
২. দাগ মুছে ফেলুন
যদি কাপড়ের মাঝে এমন কোনো রঙিন কাপড় থাকে যেখান থেকে সহজেই অন্যান্য কাপড়ে রং ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা সরিয়ে ফেলুন। তাছাড়া বিভিন্ন কাদামাটির দাগ, রঙের দাগ, কফির দাগ ইত্যাদি আলাদাভাবে তুলে ফেলতে পারলে সাথে থাকা অন্যান্য কাপড়-চোপড় মোটামুটি সুরক্ষিত থাকবে।
অর্থ্যাৎ লন্ড্রিতে দাগযুক্ত জামাকাপড় থাকলে তা একটি একটি করে মেশিনে দিয়ে পরিষ্কার করুন নতুবা মেশিন ছাড়াই আলাদাভাবে পরিষ্কার করুন।
৩. আলাদা আলাদা কাপড় দিন
ভারী কাপড় এবং হালকা কাপড় আলাদা আলাদা করে ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া উচিত। শার্ট, সুয়েটার, স্টোনের কাজ করা ড্রেস ইত্যাদি পোষাক আলাদা করে তবেই ওয়াশিং মেশিনে দিন।
বিশেষ করে জিন্স এবং জ্যাকেটের মতো মোটা কাপড়ের সাথে পাতলা স্ক্রাফের কাপড় মেশানো যাবে না। প্রয়োজনে রং অনুযায়ীও কাপড়-চোপড় আলাদা করে ফেলুন।
মাথায় রাখবেন জর্জেট শাড়ি, ওড়না বা ড্রেস কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া যাবে না। এই ধরণের সেনসিটিভ কাপড় আপনি নিজেই ধুয়ে ফেলুন। এতে করে মেশিনের কারণে কাপড় নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
৪. মেশিনে ওভারলোড করবেন না
ওয়াশিং মেশিনে কখনোই অতিরিক্ত কাপড় দেবেন না। আপনার কি ধরনের ওয়াশিং মেশিন আছে তার উপর নির্ভর করে আপনাকে কাপড়ের পরিমাণ সিলেক্ট করতে হবে।
তাছাড়া মেশিনে অতিরিক্ত কাপড় দিলে তা ঘুরে ঘুরে সাবান পানির সাথে সহজেই পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পাবে না।
আর হ্যাঁ! ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার শুরুতে কাপড়ের সাথেই পানি এবং সাবান গুলিয়ে তবেই তা মেশিনে দিন। ফলে সাবান বা পাউডার কম খরচ হবে এবং কাপড়-চোপড় বেশ দ্রুত পরিষ্কার হবে।
৫. মেশিনের পানি শুকিয়ে নিন
ওয়াশিং মেশিনের সবচেয়ে সেনসিটিভ বিষয় হলো এর স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। সুতরাং ব্যবহারের পর মেশিনের দরজা কিছুক্ষণের জন্য খুলে রাখুন। এতে করে পানিও শুকাবে আবার ভেতরে থাকা দুর্গন্ধও কমবে।
পরবর্তীতে সুতি কাপড়ের সাহায্যে নিজ হাতেই হালকা করে ভেতরটা মুছে দিতে পারেন। শুধু ব্যবহারের পরপর নয়! বরং ওয়াশিং মেশিন নিয়মিত পরিষ্কার করাটা বেশ জরুরি। সুতরাং নিয়মিত মেশিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার কিছু টিপস
যারা ভাবছেন এখন থেকে সঠিক উপায়ে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় পরিষ্কার করবেন তারা উপরোক্ত নিয়মের পাশাপাশি নিচের এই টিপসগুলি ফলো করতে পারেন। এতে করে মেশিন যেমন অনেকদিন ঠিক থাকবে তেমনই কাপড়ও হবে নতুনের মতো পরিষ্কার।
- পানি তাপমাত্রা: কাপড়ের রং ঠিক রাখতে সঠিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। রঙ, ফ্যাব্রিক এবং আপনার কাপড় কতটা নোংরা তা জেনে তবেই এই পানির তাপমাত্রা সেট করতে হবে। যেসব কাপড়ে অনেক বেশি দাগ আছে সে-সব কাপড় পরিষ্কারের জন্য গরম পানি ব্যবহার করুন। বেশি হাই লাইটিং কাপড়, উজ্জ্বল কাপড়, গাঢ় রঙের কাপড় এবং লিনেন কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে ঠান্ডা পানি।
- নেট ব্যাগ: ওয়াশিং মেশিনে যদি আন্ডারগার্মেন্টস ধোঁয়ার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে নেট ব্যাগে তা রেখে মেশিনে দিতে পারেন। তবে এই ধরণের পোষাক মেশিনে দেবার আগে কড়া, বা হুক জয়েন করতে ভুলবেন না।
- রোদে শুকান: ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোঁয়ার সময় কাপড় ফ্যানের নিচে বা গ্যাসের চুলার উপর না শুকিয়ে রোদে শুকোতে দিন। উজ্জ্বল রঙের কাপড় কড়া রোদে না দিয়ে হালকা রোদ পড়েছে বা রোদের তেজ কম এমন স্থানে শুকোতে দিন।
- পরিষ্কার রাখুন: মূলত যেকোনো ওয়াশিং মেশিন প্রতি ৩০ দিন পরপর পরিষ্কার রাখলে ভালো হয়। জমে থাকা ময়লা, সাবান এবং পানি দূর করে প্রতি ৩০ দিন পরপর ওয়াশিং মেশিনের যত্ন নিন, পরিষ্কার করুন।
- সাদা কাপড়: সাদা কাপড় কোনো ধরণের রঙিন কাপড়ের সাথে মেশিনে দেবেন না। এতে করে দাগের কারণে বা রঙের কারণে সাদা কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- ওয়াশিং টাইম: কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী কোন ধরণের কাপড়ের জন্য কতক্ষণ মেশিন চলবে তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
- সাবান পানি: আজকাল বাংলাদেশে ওয়াশিং মেশিনের জন্য আলাদা সাবান পাউডার পাওয়া যায়। টাকা খরচ করে এসব পাউডার কেনার কোনো দরকার নেই। কারণ সাধারণ ডিটার্জেন্ট পাউডারেই ওয়াশিং মেশিন সহজেই কাপড় পরিষ্কার হয়ে যায়।
ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে যেসব ভুল করা যাবে না
- ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের সময় কমান্ড দিতে হবে
- সঠিক ব্র্যান্ডের এবং সঠিক কোয়ালিটির ওয়াশিং মেশিন না কিনলে দ্রুত কাপড় নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে পিকাবু শপের সাহায্য নিন।
- অনুপযুক্ত কাপড়-চোপড়ও গরম পানির সাহায্যে পরিষ্কার করা যাবে না।
- কাপড়ের ধরণ এবং রং অনুযায়ী কাপড় আলাদা করে না নেওয়া।
- ব্যবহার করবেন না এমন ফিচারের ওয়াশিং মেশিন কিনে বাড়তি অর্থের অপচয় করা ঠিক না।
- মেশিনে কাপড় ধোঁয়ার সময় খুব বেশি ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করা যাবে না।
- ঝামেলা মনে করে প্রয়োজনের সময়েও লন্ড্রি নেট ব্যাগ ব্যবহার না করা।
- কাজ শেষে মেশিনের দরজা বন্ধ রাখা যাবে না। এতে ভেতরের দুর্গন্ধ বের হতে পাররে না।
শেষ কথা
আশা করি কীভাবে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন এবং এটি ব্যবহারের কার্যকরী সকল উপায়গুলো সম্পর্কে আপনি জেনেছেন। আর হ্যাঁ! চাইলেই আপনি কাপড়ের জুতো, মোজা, কম্বল, জিন্স কাপড় সহজেই ওয়াশিং মেশিনে ধুঁতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভারী কাপড়ের সাথে হালকা কাপড় না মেশালেই হলো! ধন্যবাদ।