খাবার সংরক্ষণ ছাড়া বর্তমানে আমাদের রান্নাঘর প্রায় অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এখনকার রান্নাঘরে এজন্য ফ্রিজ একটি অতীব প্রয়োজনীয় আইটেম। রান্নাঘরের এই গুরুত্বপূর্ণ আইটেমটিকে তাই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়। এজন্য ফ্রিজ পরিষ্কার করা এবং যত্নে রাখার পদ্ধতিও জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন আজকের পিকাবু ব্লগে এই ফ্রিজ পরিষ্কার রাখতে যে ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ বা টিপস মেনে চলা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করি।
১. ফ্রিজ বন্ধ করে পরিষ্কার করুন
কখনোই ফ্রিজ বন্ধ বা আনপ্লাগ না করে ফ্রিজ পরিষ্কার করা যাবে না। এতে করে যেমন ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তেমনই শারীরিকভাবেও বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেও হতে পারে। সুতরাং প্রথম ধাপেই ফ্রিজ পরিষ্কার করতে ফ্রিজ বন্ধ করে নিন।
২. ফ্রিজ খালি করুন
দ্বিতীয় ধাপে এসে আপনাকে ফ্রিজের তাক এবং ড্রয়ার থেকে সমস্ত খাবার-দাবার এবং জিনিসপত্র নামিয়ে ফেলতে হবে।
আরো ভালোভাবে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে কিংবা ডিপ ক্লিনিং করতে ফ্রিজের তাক এবং বিনগুলো টেনে বাইরে নিয়ে আসুন। এতে করে ফ্রিজের বিন বা বক্স এবং তাক সবগুলোকেই পৃথকভাবে পরিষ্কার করা যাবে।
এবারে একটু অপেক্ষা করুন। আপনার ফ্রিজ থেকে বের করা তাক এবং ড্রয়ার ধোয়া শুরু করার আগে তা সাধারণ তাপমাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
মনে রাখবেন, ফ্রিজের যে তাপমাত্রা রয়েছে সেই তাপমাত্রায় প্লাস্টিক বা গ্লাসে গরম পানি ব্যবহার করলে তা ফাটল ধরতে পারে বা রঙ উঠে যেতে পারে।
এভাবে বিন, তাক কিংবা ফ্রিজের অন্যান্য সরঞ্জাম বের করে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সম্ভব হলে একটু নরমাল পানির ছিটাও দিয়ে নিতে পারেন।
৩. গরম পানি ব্যবহার করুন
গরম পানি, ভিনেগার, ডিশ সোপ এবং বেকিং সোডার সাহায্যে আপনি সহজেই নরমাল ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারবেন।
তবে ফ্রিজের ভেতরে যদি গরম পানি ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই ফ্রিজে আনপ্লাগ অবস্থায় রাখতে হবে এবং পরিষ্কার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত ফ্রিজ টান্ডা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এতে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া যাবে না।
ফ্রিজকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা যেকোনো ধরণের হালকা ডিশ ওয়াশিং সাবানের গুড়া মিশিয়ে নিন। চাইলে ডিটার্জেন্ট পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন।
এবার গুলানো সাবান পানিতে নরম স্পঞ্জ কাপড় বা সুতি কাপড় অথবা থালাবাসন ধোঁয়ার নরম কাপড় ভিজিয়ে রাখুন৷ বেকিং সোডা এবং পানির সাহায্যে আরেকটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
মিশ্রণ বা পেস্টটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এই পেস্ট হলুদ টাইপের দাগ, মরিচার দাগ এবং সহজে যায় না এমন সব দাগও পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
আর হ্যাঁ! ফ্রিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে গিয়ে কোনোভাবেই কোনো ব্লিচ বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করবেন না।
৪. পরিষ্কার করা শুরু করুন
এবারে ভেজানো নরম সুতি কাপড়ের সাহায্যে ফ্রিজের দরজায় থাকা রাবার গ্যাসকেটটি মুছুন। যেকোনো রেফ্রিজারেটরের দরজার অভ্যন্তরীণ অংশে তৈরি করা রাবার সিলটিতে কিন্তু সবসময়ই বেশি ময়লা জমে থাকে। যা থেকে পুরো ফ্রিজেই দূর্গন্ধ ছড়ায়!
সুতরাং সিলটি পরিষ্কার করে নিন ভালোমতো। তারপর সাধারণ একটি কাপড়ের সাহায্যে ফ্রিজে থাকা খাবারের গুঁড়া, বরফ, ময়লা ইত্যাদি পরিষ্কার করুন।
বাড়তি ময়লা ফেলা হয়ে গেলে সাবান পানিতে ভেজানোর কাপড়ের সাহায্যে ফ্রিজের ভেতরকার অংশ মুছে নিন। যেখানে দাগ দেখবেন সেখানে বেকিং সোডা ম্প্রে করতে পারেন।
ফ্রিজের ভেতরকার অংশ পরিষ্কার হয়ে গেলে ফ্রিজের কন্টেইনার, বক্সগুলো বেসিনে রেখে বা খোলা জায়গায় রেখে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
হালকা গরম পানির সাহায্যে যদি এসব পরিষ্কার করতে পারেন সেক্ষেত্রে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে পুরোপুরি ফ্রি থাকবে আপনার ফ্রিজ ম্যাটেরিয়ালস।
৫. ফ্রিজের বাইরের অংশ পরিষ্কার করুন
সবশেষে গুলানো সাবান, ডিশ সাবান বা স্টেইনলেস স্টিল ক্লিনার দিয়ে ফ্রিজের বাইরের অংশ পরিষ্কার করুন। হালকা গরম পানিতে সাবান পাউডার যোগ করে নরম কাপড় তাতে ভিজিয়ে ফ্রিজের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে পারবেন।
যদি ফ্রিজের দরজার চারপাশে স্টেইনলেস স্টিলের বর্ডার থাকে সেক্ষেত্রে স্টেইনলেস স্টিল ক্লিনিং সাবান ব্যবহার করতে পারেন। এই সাবান আপনি যেকোনো অনলাইন শপ কিংবা কুকারিজের শপে পেয়ে যাবেন।
ফ্রিজের সামনের অংশ পরিষ্কার করার পাশাপাশি কিন্তু ফ্রিজের উপরের অংশ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। সাধারণত উপরের অংশে অতটা ফোকাস করা হয় না বলে এতে সময়ে সময়ে বেশ ময়লা আবর্জনা জমে থাকে। সুতরাং তা নরম সুতি কাপড়ের সাহায্যে কয়েকবার করে মুছে নেবেন।
ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গিয়ে যেসব ভুল এড়িয়ে চলতে হবে
ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এতে খারাপ গন্ধ, ভেতরের পরিবেশ নষ্ট এবং মাঝেমধ্যে খাবার নষ্ট করে হয়ে যেতে পারে।
সুতরাং ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতেই হবে। কিন্তু এই আবশ্যক কাজ করতে গিয়ে আবার ফ্রিজের ক্ষতি করে না বসি। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে:
- খাবারের সম্ভাব্য দূষণের কারণে যদি ফ্রিজ পরিষ্কার করেন সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই কোনো ধরণের রাসায়নিক উপাদান ফ্রিজে ব্যবহার করা যাবে না।
- বিদ্যুৎ চলাকালীন সময়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করা যাবে না।
- ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় সময়ের অভাবে অথবা অসতর্কভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ নষ্ট খাবার পরীক্ষা না করা রেখে দেওয়া যাবে না।
- ফ্রিজের তাক বা দরজা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ভিনেগারের হালকা মিশ্রণ ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহার না করলে দরজার ফাঁকে খাবার জমে থাকতে পারে।
- ফ্রিজে থাকা জিনিসগুলো পরিষ্কার করার সময় যেকোনো বিন, তাক বা কন্টেইনার বাদ দেওয়া যাবে না। অন্যথায় পরিষ্কার করা জিনিসপত্রের সাথে অপরিষ্কার জিনিসপত্র মিশে যাবে।
- নিয়ম মেনে অন্তত মাসে একবার ফ্রিজ পরিষ্কারে মনোযোগ দিতে হবে।
সবশেষে ফ্রিজ সম্পর্কে আপডেট জানতে পিকাবু শপের সাথেই থাকুন।
উপসংহার
সুতরাং ফ্রিজ ভালো রাখতে এবং ফ্রিজে থাকা খাবার নিরাপদে রাখতে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে অনুসরণ করুন এই ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আশা করি প্রতি মাসে ফ্রিজ পরিষ্কার রাখতে পারলে অতিরিক্ত ময়লা জমে যাবে না। ফলস্বরুপ পরিষ্কার করার সময় বাড়তি কোনো ঝামেলা হবে না। ধন্যবাদ।