বর্তমান যুগে রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি অতি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস হলো Induction Cooker এবং আমরা সকলেই কম বেশি এর সাথে পরিচিত। এটি যেহেতু একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাই এটি কেনার পূর্বে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং কেনার পর অবশ্যই সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। Induction Cooker ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই বিদ্যুতের সাহায্যে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত রান্না করা যায় যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে।
Induction Cooker এর গুণমান অনুযায়ী দামও অনেকটা বেশি তাই অবশ্যই এটি কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিবেচনা করতে হবে। আজকের পিকাবু ব্লগে আমরা ইন্ডাকশন কুকার কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
১. পাওয়ার ও কুকিং জোন
Induction Cooker কেনার আগে একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয় হলো পাওয়ার রেটিং এবং কুকিং জোন এর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা। সাধারণত দ্রুত রান্না করার জন্য উচ্চ ওয়াট বা কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ইন্ডাকশন কুকার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন মডেল অনুসারে ইন্ডাকশন কুকারে কুকিং জোনের সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ইন্ডাকশন কুকার কেনার আগে অবশ্যই এই পাওয়ার রেটিং ও কুকিং জোনের ব্যাপারটি নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে এবং আপনার চাহিদা অনুযায়ী মডেল বাছাই করতে হবে। আপনি এখান থেকে ইন্ডাকশন কুকারের ফিচার দেখে নিতে পারেন।
২. কুকওয়্যারের সামঞ্জস্যতা
ইন্ডাকশন কুকার কেনার সময় অবশ্যই কুকওয়্যারের সামঞ্জস্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ইন্ডাকশন কুকারে যেকোনো ধরনের পাত্র দিয়ে রান্না করার কাজ করা যায় না; এটি ব্যবহারের জন্য ম্যাগনেটিক কুকওয়্যারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। রান্না করার সময় সামঞ্জস্যতা রাখার ক্ষেত্রে ইনডাকশন কুকারের জন্য বিশেষ পাত্রগুলো ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই রান্নার সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ পাত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. আকার ও ডিজাইন
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন আকার ও ডিজাইনের ইন্ডাকশন কুকার পাওয়া যায়। তবে ইন্ডাকশন কুকার কেনার আগে অবশ্যই আপনার চাহিদা অনুযায়ী আকার ও ডিজাইন নির্বাচন করে নিতে হবে। কুকার ইনস্টলেশনের জায়গার মাপ নিশ্চিত করে তবেই ইন্ডাকশনের আকার আকৃতি নির্ধারণ করতে হবে এবং এই বিষয়টি অবশ্যই কেনার ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে।
৪. নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য
ইন্ডাকশন কুকার কেনার আগে অবশ্যই এর নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য গুলো দেখে নিতে হবে কারণ একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে যা পরবর্তীতে ব্যবহার করা অনিরাপদ হতে পারে। তাই কেনার আগে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্য যেমন তাপমাত্রা, সেটিংস, টাইমার, ফাংশন ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখে নিতে হবে। এছাড়া এ ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য থাকে যেমন শার্ট অফ, চাইল্ড লক, ওভারহিট প্রটেকশন ইত্যাদি। অবশ্যই সকল ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করে তারপরই ইন্ডাকশন কিনতে হবে।
৫. শক্তি ও কর্মদক্ষতা
ইন্ডাকশন কুকার কেনার সময় অবশ্যই এর শক্তি ও কর্মদক্ষতা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং চেক করে নিতে হবে। কিছু মডেলের কুকারে এনার্জি সেভিং অর্থাৎ শক্তি সাশ্রয় করার বৈশিষ্ট্য থাকে এবং একই সাথে অধিক কর্মদক্ষতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। সহজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের এনার্জি সেভিং তবে অধিক কর্মদক্ষতা সম্পন্ন মডেল বাছাই করে নিতে হবে।
৬. ব্র্যান্ড এবং মূল্য
ইন্ডাকশন কুকার কেনার আগে অবশ্যই একটি ভালো মানের এবং স্বনামধন্য ব্র্যান্ড নির্বাচন করতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে কোন ধরনের সমস্যা হলে কোম্পানি থেকে সাপোর্ট পাওয়া যায়। ব্র্যান্ড নির্বাচন করার পাশাপাশি আপনার বাজেট অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যেই একটি ভালো মডেলের ইন্ডাকশন কুকার বাছাই করতে হবে। ব্র্যান্ড নির্বাচন করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের রিভিউ দেখে নিতে পারেন।
৭. ওয়্যারেন্টি ও সাপোর্ট
যেহেতু ইন্ডাকশন কুকার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাই এটি কেনার আগে অবশ্যই ওয়্যারেন্টি, গ্যারান্টি ও আফটার সেল সাপোর্ট অর্থাৎ পণ্য কেনার পর বিক্রেতার সাপোর্টের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এ ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনার আগে অবশ্যই ওয়্যারেন্টি ও সাপোর্টের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং চেক করে নিতে হবে।
৮. শব্দ বা নয়েজ লেভেল
ইন্ডাকশন কুকার কেনার সময় অবশ্যই এর শব্দ বা নয়েজ লেভেলের দিকটি বিবেচনা করতে হবে। কিছু মডেলের ইন্ডাকশন কুকার আছে যেগুলো শব্দ সৃষ্টি করে বা নয়েজ লেভেল বেশি থাকে এবং এ কারণে রান্না করার সময় বিরক্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই ইন্ডাকশন কুকার কেনার পূর্বে নয়েজ লেভেল অবশ্যই চেক করে নিতে হবে।
৯. সেটিংস ও ইনস্টলেশন
ইন্ডাকশন কুকার সহজে ব্যবহার করার জন্য এটি কেনার পূর্বে অবশ্যই সেটিংস সম্পর্কে অবগত হতে হবে এবং আপনার চাহিদা অনুসারে মডেল বাছাই করতে হবে। সেটিংস এর পাশাপাশি ইন্ডাকশন কুকার ইন্সটলেশনের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এটি ব্যবহার করার জন্য একটি ডেডিকেটেড আলাদা সার্কিট এর প্রয়োজন হয় এবং এই ধরনের বৈদ্যুতিক সেটআপ আপনার বাসায় আছে কিনা তা কেনার পূর্বে অবশ্যই নিশ্চিত করে নিতে হবে।
১০. রক্ষণাবেক্ষণ
ইনডাকশন কুকার কেনার ক্ষেত্রে সহজেই যাতে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সেই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। ইন্ডাকশন কুকার এর কিছু মডেলের উপরিভাগ কাজ বা সিরামিকের হয়ে থাকে যার ফলে এগুলো বিশেষ যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তাই এমন মডেল বাছাই করতে হবে যা সহজেই যত্ন নেয়া যায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি উপকারি ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে ইন্ডাকশন কুকার পরিচিত হলেও এটি ক্রয় করার খরচ বেশ ব্যয়বহুল। তাই এটি কেনার আগে অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা রাখতে হবে এবং সকল বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই এটি কিনতে হবে।
শেষ কথা
বর্তমান যুগে ইন্ডাকশন কুকার একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসে রূপান্তরিত হয়েছে তবে এর বাজার মূল্যও নেহাত কম নয়। তাই Induction Cooker কেনার আগে অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিতে হবে এবং বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আরও জানতে প্রতিনিয়ত পিকাবু ব্লগ চেক করুন। ধন্যবাদ।