প্রয়োজনের তাগিদে ২৪ ঘন্টাই আমাদের ফ্রিজ ব্যবহার করা লাগে। মাস শেষে চলে আসে অনেক টাকার বিল। বিল দেখেই এভাবে চোখ কপালে তুলতে না চাইলে আপনাকে জানতে হবে ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়। পিকাবুর সাথেই থাকুন।
ফ্রিজ বা Refrigerator এ বিদ্যুৎ বিল কমানোর ৫ টি টিপস
ইউটিলিটি বিল দিন দিন বাড়ছে! আর এই লাগামহীন বিলের অন্যতম কারিগর ফ্রিজ বা Refrigerator এর ব্যবহার। তবে এমন কিছু টিপস আছে যা ফলো করলে আপনি সহজেই ফ্রিজের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে নিচের টিপসগুলো ফলো করতে হবে:
১. অপ্রয়োজনে আনপ্লাগ করে রাখুন
যখন ফ্রিজ চালানোর কোনো প্রয়োজন পড়বে না তখন ফ্রিজের লাইন আনপ্লাগ করে রাখুন। কারণ অনেক ইলেক্ট্রিক জিনিসপত্র স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকা অবস্থায়ও বা সুইচ অফ করা অবস্থায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। ফলে বিদ্যুতের অপচয় হয়। আর এই ধরণের সিস্টেমকে বলা হয় ফ্যান্টম লোড। তাছাড়া ফ্রিজে অনেক সময় এমনকিছু খাবার-দাবার থাকে যেসব খাবার-দাবার সহজে পচনশীল নয়। মাঝেসাঝে ২/৩ ঘন্টা ফ্রিজ অফ রাখলেও এসব খাবারে কোনো ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। সুতরাং ঝোঁপ বুঝে কোপ মারতে যখন প্রয়োজন পড়বে না তখন সকেট থেকে ফ্রিজের লাইন আনপ্লাগ করে ফেলবেন। দেখবেন এতে করে ফ্রিজের বিল বাবদ বিদ্যুত বিলের পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে।
২. ফ্রিজের তাপমাত্রা নির্ধারণে সতর্ক হোন
ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় হিসাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা নির্ধারণে সতর্ক হতে পারেন। আর এই তাপমাত্রা নির্ধারণে ২ টি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। একটি হলো আবহাওয়া এবং অন্যটি হলো ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র। সাধারণত ঠান্ডা পরিবেশে খাবার-দাবার খুব একটা নষ্ট হয় না। তাছাড়া এমন অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে যা স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও অনেকক্ষণ ভালো থাকে। যাইহোক! এই পয়েন্টের সারংশ হলো ফ্রিজের তাপমাত্রার পরিমাণ শীতকালে খানিকটা কমিয়ে রাখতে পারেন। পাশাপাশি মাঝেসাঝে পরিস্থিতি বুঝে এবং খাবারের ধরণ বুঝেও খানিক সময়ের জন্য তাপমাত্রা পুরোপুরি কমিয়ে রাখতে পারেন।
৩. ফ্রিজে সর্বদা খাবার স্টোর করে রাখুন
ফ্রিজে যতটুকু জায়গা ঠিক ততটুকু খাবার রাখুন। অর্থ্যাৎ ফ্রিজ যেনো খালি না থাকে। এই টিপসটি এভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো অনেকেই ভাবেন ফ্রিজে কম জিনিসপত্র রাখলে বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ অনেকটা কম আসবে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। এই ভয়ে যদি আবার ফ্রিজে কম খাবার-দাবার রাখেন তাহলে তো আপনারই লস! তবে হ্যাঁ! বেশি খাবার রাখতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্তভাবে গাদাগাদি টাইপের পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। ফ্রিজের ভেতরে যেনো ভালোভাবে বাতাস আসা-যাওয়া করে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি খাবার-দাবার স্টোর করার সময় যথাসম্ভব সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হবে। এতে করে কম সময়ে নির্দিষ্ট বক্স বা প্যাকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
৪. ফ্রিজের সঠিক অবস্থান এবং দরজার ব্যবহার নিশ্চিত করুন
শুরুতে ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় হিসেবে ফ্রিজের সঠিক অবস্থানটি ক্লিয়ার করি। ফ্রিজের সার্ভিস মূলত কুলিং সিস্টেম রিলেটেড হলেও ফ্রিজের বাইরের দিকে হাত রাখলে বুঝবেন মাঝেমাঝেই ফ্রিজ অনেক গরম হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রিজের প্রয়োজন খোলামেলা পরিবেশ। কারণ বায়ু চলাচলে ফ্রিজের ভেতরকার এবং বাইরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। সুতরাং ফ্রিজের চারপাশে অন্তত ৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব নিশ্চিত করুন। পাশাপাশি ফ্রিজের দরজার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, কখনোই ১ মিনিটের বেশি সময় ধরে ফ্রিজের দরজা খোলা রাখা যাবে না। কারণ বাইরের টেম্পারেচার ভেতরে প্রবেশ করলে ফ্রিজের ভেতররকার যন্ত্রটির উপর চাপ বেড়ে যাবে। এতে করে দিনশেষে মোটা অংকের অর্থ ইলেক্ট্রিসিটির বিল বাবদ খরচ করতে হবে।
৫. সঠিক উপায়ে ফ্রিজ পরিষ্কার রাখুন
ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্টসের মধ্যে একটি হলো ফ্রিজের কয়েল। এটি নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। যদিও এটি পরিষ্কার রাখার সাথে কারেন্টের বিলের কোনো সম্পর্ক নেই! তবে কয়েল পরিষ্কার না রাখলে ফ্রিজ বেশ অল্প সময়ের মাঝেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই নিয়মিত হারে রেফ্রিজারেটরের কনডেন্সার কয়েল পরিষ্কার রাখুন। এতে জমে থাকা ধুলোবালি মুছে নিন। সেই সাথে ফ্রিজে খাবার-দাবার সংগ্রহের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। কিছুটা গরম এমনকি কুসুম গরম কোনো খাবারও যাতে ফ্রিজে না রাখা হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকুন। আর হ্যাঁ ফ্রিজে রাখা খাবার সংগ্রহে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাঁচের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে কম তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ ধরে খাবার ঠান্ডা থাকবে।
রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার রাখার নিয়ম
নিয়মিত হারে রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার রাখার বিষয়টি ফ্রিজের Electricity Bill কমানোর পাশাপাশি ফ্রিজের স্থায়িত্বকেও বাড়িয়ে দেয়। চলুন তবে আর্টিকেলের এই অংশ ফ্রিজ পরিষ্কার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই:
- ফ্রিজের সুইচ অফ না করে কোনোভাবেই ফ্রিজ পরিষ্কার করতে যাবেন না। নতুবা একদিকে যেমন দূর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা থাকবে, অন্যদিকে ঠিক তেমনই বরফের কারণে সঠিকভাবে ফ্রিজ পরিষ্কার করার সুযোগও থাকবে না।
- সুইচ বন্ধ করে ফ্রিজের পেছনে যে কয়েলটি আছে সেটি পরিষ্কার করে নিন। এটি পরিষ্কার করতে নরম ঝাড়ু ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন এই স্টেপে কোনো ধরণের ভেজা কাপড় ব্যবহার করা যাবে না।
- ফ্রিজে থাকা শেলফ ও ট্রেগুলো বের করে ভালো মতো সাবান পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। খানিকবাদে একটি নেটের সাহায্যে হালকা ঘষে নিন এবং পরিষ্কার পানিতে ধুঁয়ে নিন।
- অন্যদিকে ফ্রিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে কুসুম গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে তা ব্যবহার করতে পারেন। আর এই স্টেপে ব্যবহার করতে পারেন স্পঞ্জের কোনো কাপড় বা নেট।
- সবশেষে বাইরের অংশটি পরিষ্কার করে খাবারগুলোকে আবারও স্টোর করুন। পরিষ্কার-পর্ব শেষ হলে ফ্রিজের সুইচ অন করে দেখুন সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
ইতি কথা
আশা করি ফ্রিজ বা Refrigerator এ বিদ্যুৎ বিল কমানোর এই ৫ টি টিপস ফলো করতে পারলেই আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেকটা কমে আসবে। সেই সাথে ফ্রিজও ভালো থাকবে বহুবছর ধরে। মনে রাখবেন অপরিষ্কার রাখা ফ্রিজের খাবারে বিভিন্ন জীবাণু জমে থাকে এবং এতে বিভিন্নভাবে সিস্টেম লস হয়। সুতরাং সমস্যা থেকে বাঁচতে ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার জানুন এবং নিয়মিত তা পরিষ্কার রাখুন।