জীবন অনেক ছোট! এই ছোট্ট জীবনে এটা-ওটা ভাজাভাজিতে তথাকথিত চুলা কিংবা গ্যাস চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বাজেট ফ্রেন্ডলি এয়ার ফ্রায়ার মেশিন বাজার থেকে কিনে এনে নিমিষেই সেরে ফেলতে পারেন সকল ভাজাভাজির কাজ।
তবে এক্ষেত্রে নতুন এয়ার ফ্রায়ার যা কিনতে চাচ্ছেন তাদের মনে হালকাপাতলা টর্নেডোও দেখা দিতে পারে। চিন্তা হতে পারে, কিভাবে এই নতুন মেশিন ব্যবহার করে বা কিভাবে সহজেই ভাজাভাজির কাজ সারা যায় অল্প সময়ে। আর এ সমস্ত চিন্তা দূর করতেই সাজানো হয়েছে আজকের এই লেখাটি। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে আজকের পিকাবু ব্লগে Air Fryer ব্যবহারের ৫টি দারুণ টিপস জেনে আসি।
টিপস ০১: সেট আপ করুন
যেহেতু এটি একটি মেশিন এবং কারেন্টের লাইন ছাড়া চলবে না সেহেতু ব্যবহারের পূর্বে এটিকে ভালোভাবে সেট আপ করতে হবে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য না নিয়ে আপনি নিজেই কাজটি সেরে নিতে পারেন।
প্রথমে এটিকে প্যাকেজিং থেকে বের করুন। সাথে থাকা সকল ম্যাটেরিয়ালস বের করে গুছিয়ে নিন। সাথে থাকা ইউজার কপিটি ভালোভাবে পড়ে নিন। সাথে থাকা ট্রিকসগুলি পড়ে নিতে পারলে পুরো কাজটি সহজ মনে হবে। পাশাপাশি এয়ার ফ্রায়ারটি খানিকটা ভালোভাবে মুছে নিতে পারেন। এবারে ইলেক্ট্রিক বোর্ড কিংবা কিচেনের তাক বোর্ড থেকে মোটামুটি দূরত্বে আছে এমন স্থান বেছে নিন। যেখানে আপনি প্রতিদিন ফ্রায়ারটি ব্যবহার করতে পারবেন এবং সুবিধামতো সরিয়ে পরিষ্কার করতে পারবেন। এবারে কর্ড নিরাপদ আছে কিনা শিউর হয়ে মেশিনটি বোর্ডে প্লাগ করুন। যারা নতুন এয়ার ফ্রায়ার কিনবেন তারা একটি কিচেন বাস্কেটও পাবেন। এই সুযোগে সেই বাস্কেট বা ঝুঁড়িটি ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুঁয়ে পরিষ্কার করে নিন। মনে রাখবেন এই ঝুঁড়ি পানি না ঝড়িয়ে ব্যবহার করলে খাবার ভাজতে সমস্যা হয়।
বেশকিছু এয়ার ফ্রায়ারে মেশিন টেস্ট করার সুযোগ থাকে। এ ব্যাপারে দোকানদারের সাথে আগেভাগেই কথা বলে নিবেন। যদি মেশিন টেস্ট করার অপশন থাকে তাহলে টেম্পারেচার এবং সময় সেট করে পাওয়ার বাটন অন করুন এবং চেক করুন মেশিন চলছে কিনা।
টিপস ০২: খাবার প্রস্তুত করুন
Air Fryer ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ঠিকভাবে এটিতে খাবার এড করার বিষয়টি। কারণ এই মেশিনে যেনোতেনোভাবে খাবার দিলে মেশিন কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। শুরুতে বলবো প্রিহিটের কথা। Air Fryer ব্যবহারের পূর্বে অর্থ্যাৎ খাবার দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই তা প্রি-হিটে গরম করে নিতে হবে। বাড়তি স্বাদের জন্যে যেকোনো খাবার ভাজার আগে আপনি চাইলেই কিন্তু বিভিন্ন মশলা বা তেল ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তা আগে থেকে মেরিনেট করে রাখতে পারলে খাবারের স্বাদ বহুগুণে বেড়ে যাবে।
আপনি যে খাবার রান্না করবেন সেই খাবার প্রস্তুত হতে কত সময় লাগবে তা আগে থেকেই জেনে নেবেন। পরে সে অনুযায়ী টাইম এবং টেম্পারেচার সেট করে Air Fryer মেশিনে রান্না করবেন। কারণ সব খাবারের রান্না একই হিটে একই সময়ে হয় না। সোজা কথা রান্না শুরু করতে ঝুড়ি বা ট্রেটি এয়ার ফ্রায়ারের মধ্যে রাখুন, স্টার্ট বোতাম টিপে বা টাইমার সেট করে দ্রুত রান্না শুরু করে দিন।
টিপস ০৩: খাবার ঝাঁকিয়ে নিন এবং টেস্ট করে নিন
Air Fryer মেশিনে খাবার রান্না হতে হতে প্রয়োজনে খাবার ঝাঁকিয়ে নেবেন। যেটাকে বলে উল্টেপাল্টে রান্না করা। এতে করে খাবার যেমন ভালোভাবে রান্না করা হবে তেমনই খাবারের স্বাদও বহুগুণে বেড়ে যাবে। আর হ্যাঁ এই প্রসেসে খাবার উল্টাতে কেবল খাবার ট্রে বা ঝুঁড়িটি উল্টালেই চলবে। খাবার ভালোমতো হয়েছে কিনা তা অবশ্যই মাঝেসাঝে চেক করে নেবেন। এক্ষেত্রে কাঁটাচামচ বা চিকন কোনো কাটি ব্যবহার করতে পারেন। আর রান্না করার সময় অবশ্যই ব্যালেন্স করে নেবেন। বিশেষ করে মাংস বা সবজির বড় টুকরা রান্না করার সময় এই ব্যালেন্স বেশ জরুরি। যে খাবার রান্না হতে দেরি হবে তা শুরুতে দিয়ে দ্রুত রান্না হবে এমন খাবার পরে দেবেন। নতুবা খাবার অনেক বেশি ভাজা হয়ে যাবে। এতে করে খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবার চান্স থাকে।
টিপস ০৪: খাবার পরিবেশন করুন
ব্যাস! হয়ে গেলো Air Fryer মেশিনে আপনার রান্না করা প্রথম খাবার। ভাজাভুজির জন্যে এই মেশিন যে কত উপকারী তা এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন! রান্নাবান্নার পালা শেষে কিচেন ফ্রেন্ড Air Fryer মেশিনটিকেও ভালোমতো পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে ভুলবেন না কিন্তু। এক্ষেত্রে টিপস ৫ ভালোভাবে পড়ুন।
টিপস ০৫: মেশিন পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করুন
পরিষ্কার করার আগে অবশ্যই এয়ার ফ্রায়ারকে ঠান্ডা করে নেবেন। গরম গরম এয়ার ফ্রায়ার পরিষ্কার করতে গেলে যেকোনো বিপদ ঘটতে পারে। ঠান্ডা করলে মেশিনের ভেতর থেকে বের হওয়া ঝুড়ি বা ট্রেটি নিন। হালকা গরম পানিতে ডিশওয়াশ মিশিয়ে তা দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। অন্যদিকে সরাসরি কোনো পানি ব্যবহার না করে একটি স্যাঁতসেঁতে কাপড় দিয়ে এয়ার ফ্রায়ারের বাইরের অংশটি মুছে নেবেন। এতে করে বাইরে লেগে থাকা ময়লা বা তেলচর্বি দূর হয়ে যাবে। ট্রেসহ পুরো মেশিন পরিষ্কার করার পর তা শুকাতে ছড়িয়ে রাখতে পারেন। তবে সরাসরিই রোদের নিচে রাখা যাবে না। ভালো হয় ফ্যানের নিচে ৩০/৪০ মিনিট শুকাতে দিলে।
সবশেষে অনেকদিন মেশিন ভালো রাখতে শীতল এবং শুকনো কোনো জায়গায় শখের এয়ার ফ্রায়ারটি সংরক্ষণ করুন। আর হ্যাঁ সংরক্ষণ করার সময় মেশিনটি সঠিকভাবে বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তা চেক করে নেবেন।
শেষ কথা
এই ছিলো নতুনদের জন্য Air Fryer ব্যবহারের ৫টি দারুণ টিপস। উপরোক্ত টিপসগুলি ফলো করার পাশাপাশি অবশ্যই আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন। বিশেষ করে রান্না করার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার এড়িয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। কারণ এয়ার ফ্রায়ারে খাবার ভাজতে গতানুগতিক বাড়তি তেলের প্রয়োজন পড়ে না।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা চিকেন উইংসসহ যেকোনো রান্নায় খাবার উল্টেপাল্টে নেবেন। নতুবা দেখবেন খাবারের এক পাশ ভালো হয়েছে তো অন্য পাশ হয়নি! মনে রাখবেন কম রান্না করা খাবার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সুতরাং এয়ার ফ্রায়ারে খাবার ভালোভাবে রান্না হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন। সাবধানতা হিসাবে ফ্রায়ারের ট্রেতে কোনো ধাতব টাইপের জিনিস রাখা থেকে বিরত থাকবেন।
আশা করি Air Fryer ব্যবহারের এই টিপসগুলি আপনাকে সহায়তা করবে। ধন্যবাদ।