No Comments

শীতে এসির যত্নে যা করবেন

Energy Efficient Smart Air Conditioner in Bangladesh by Pickaboo

শীতকালে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যায়। তবে এই সময় এসির সঠিক যত্ন না নিলে এটি নষ্ট হতে পারে বা কর্মক্ষমতা হারাতে পারে। শীতে এসির যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের বাইরে থাকলে এর বিভিন্ন অংশে সমস্যা হতে পারে। নিচে আজকের পিকাবু ব্লগে শীতকালে এসির যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। 

১. এসি পরিষ্কার রাখা

শীতে এসি ব্যবহার না করলে এটিতে ধুলোময়লা জমে যায়। যে কারণে এটির এয়ার ফিল্টার, ইভাপোরেটর কয়েল এবং কনডেনসার কয়েল ভালোভাবে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

কীভাবে পরিষ্কার করবেন:

  • এয়ার ফিল্টার: এটি খুলে ভেজা কাপড়ে ধুয়ে শুকিয়ে আবার লাগিয়ে দিন। মাসে একবার ফিল্টার পরিষ্কার করা ভালো।
  • ইভাপোরেটর এবং কনডেনসার কয়েল: এগুলোতে ধুলা জমলে এসির কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাজারে পাওয়া যায় এমন স্প্রে ক্লিনার ব্যবহার করে ময়লা পরিষ্কার করা যায়।
  • বাহ্যিক অংশ: এসির বাহিরের অংশও পরিষ্কার রাখুন। একটি শুকনো কাপড় দিয়ে নিয়মিত ধুলা মুছে নিন।

২. ড্রেন পাইপ পরিষ্কার করা

এসির ড্রেন-পাইপের মাধ্যমে জমে থাকা পানি বের হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এটি পরিষ্কার না করলে পাইপে ময়লা জমে যেতে পারে, যা থেকে দুর্গন্ধ বা পানির লিকেজ হতে পারে।

ড্রেন পাইপ পরিষ্কার করার পদ্ধতি:

  • এসি বন্ধ করে ড্রেন পাইপ খুলে নিন।
  • হালকা গরম পানি দিয়ে পাইপ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • প্রয়োজন হলে পাইপের ভেতর ব্রাশ ব্যবহার করুন।

৩. এসি নিয়মিত চালু করা

শীতকালে অনেকেই এসি পুরোপুরি বন্ধ করে রাখেন কিন্তু এটি যন্ত্রাংশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে এসির ভেতরের যন্ত্রাংশ যেমন কম্প্রেসর বা মোটর আটকে যেতে পারে যা ভবিষ্যতে এসি চালু করতে সমস্যা তৈরি করবে। তাই শীতকালেও প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য এসি চালু করে রাখা উচিত। এটি এসির ভেতরের অংশগুলো সচল রাখে এবং ময়লা বা ধুলা জমে যন্ত্রাংশে জটিলতা সৃষ্টি হতে বাধা দেয়। বিশেষত, ফ্যান মোডে চালালে ভেতরের বাতাসের প্রবাহ বজায় থাকে এবং আর্দ্রতা কমে, যা এসির দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।

৪. টেম্পারেচার সেটিং পরিবর্তন করা

শীতকালে এসির টেম্পারেচার সেটিং পরিবর্তন করে ব্যবহার করলে এটি আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। শীতের সময় ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসি চালানোর প্রয়োজন হলে তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা ভালো। এতে ঘর আরামদায়ক থাকবে এবং এসির উপর বাড়তি চাপ পড়বে না। এ ছাড়া, শীতকালে ড্রাই মোড বা ফ্যান মোড ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ কারণ এটি ঘরের আর্দ্রতা কমাতে সাহায্য করে এবং এসির ভেতরের যন্ত্রাংশ ভালো অবস্থায় রাখে। এই ধরনের সেটিং ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচও কম হয় যা অর্থ সাশ্রয় করে। শীতকালে যদি মাঝে মাঝে এসি ব্যবহার করতে চান, তবে টেম্পারেচার সেটিং ঠিক রাখতে হবে।

  • শীতে ফ্যান মোড বা ড্রাই মোড ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘরের আর্দ্রতা কমায় এবং এসিকে ভালো রাখে।
  • তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রির মধ্যে রাখুন।

৫. বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করা

দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে এসির বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়মিত এসির সংযোগ চেক করুন। প্লাগ বা তারে কোনো ক্ষতি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করুন।

৬. এসির বাইরের ইউনিটের যত্ন

এসির বাইরের ইউনিট শীতকালে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন কারণ এটি ধুলা, বৃষ্টি, ঠান্ডা বাতাস, এবং আর্দ্রতার ঝুঁকিতে থাকে। বাইরের ইউনিটে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ইউনিটের চারপাশে যেন পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাতাস চলাচলে বাধা না পায়। ধুলা বা পাতা জমে থাকলে এটি ইউনিটের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। 

বাইরের ইউনিটকে সুরক্ষিত রাখতে একটি টেকসই কভার ব্যবহার করুন, এটি ধুলা এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করবে। এ ছাড়া, একবার করে পরীক্ষা করে দেখুন, ইউনিটের ফ্যান বা অন্য যন্ত্রাংশে কোনো ময়লা জমে আছে কিনা এবং প্রয়োজনে পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন। সঠিকভাবে যত্ন নিলে বাইরের ইউনিট দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যক্ষম থাকবে।

এসির বাইরের ইউনিটও শীতকালে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে ধুলা, বৃষ্টি, বা ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে।

  • বাইরের ইউনিটে কভার ব্যবহার করুন। এটি ধুলা এবং আর্দ্রতা থেকে এসিকে সুরক্ষিত রাখবে।
  • বাইরের ইউনিটের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন, যেন বাতাস চলাচল করতে পারে।

৭. লিকেজ বা ফ্রিজেন্ট সমস্যা পরীক্ষা করা

শীতকালে এসি বন্ধ থাকলে অনেক সময় এর ফ্রিজেন্ট লিকেজ বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফ্রিজেন্ট গ্যাস লিক হলে এসি যথাযথভাবে ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করতে পারে না এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। শীতের সময় এসি চালু করার পর যদি মনে হয় ঠান্ডা বাতাস আসছে না বা এসি থেকে অস্বাভাবিক শব্দ বা গন্ধ বের হচ্ছে, তবে এটি ফ্রিজেন্ট লিকেজের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উচিত। লিকেজ ঠিক করা এবং ফ্রিজেন্ট রিফিল করালে এসি আবার সঠিকভাবে কাজ করবে। নিয়মিত চেকআপ করানো হলে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

শীতকালে এসি বন্ধ থাকার কারণে অনেক সময় ফ্রিজেন্ট লিকেজ বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

  • এসি চালু করলে যদি ঠান্ডা বাতাস ঠিকমতো না আসে, তবে ফ্রিজেন্ট লিকেজ হতে পারে।
  • পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এই সমস্যা সমাধান করুন।

জরুরি টিপস

শীতকালে এসির সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আরও কিছু জরুরি টিপস মেনে চলা উচিত। প্রথমত, এসি পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না, কারণ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এর যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার এসি চালু করে রাখুন, যেন যন্ত্রাংশ সচল থাকে। ম্যানুয়াল অনুযায়ী এসির রক্ষণাবেক্ষণ করুন এবং ফিল্টার বা ড্রেন পাইপ পরিষ্কার রাখুন। ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত সমাধান করুন। প্রয়োজন হলে পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন। এ ছাড়া, এসির বাইরের ইউনিট ঢেকে রাখার জন্য ভালো মানের কভার ব্যবহার করুন, যা ধুলা ও আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা দেবে। এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে এসি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যক্ষম থাকবে। অর্থাৎ

  • শীতকালে এসি পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না।
  • এসি ব্যবহারের নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) অনুযায়ী যত্ন নিন।
  • ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, দেরি করবেন না।

উপসংহার

শীতকালে এসির যত্ন নেওয়া হলে গরমের সময় এটি ঠিকঠাক কাজ করবে এবং আপনাকে অতিরিক্ত মেরামতের খরচও থেকে বাঁচাবে। নিয়মিত পরিষ্কার এবং যত্নের মাধ্যমে এসি দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যক্ষম রাখা সম্ভব। তাই শীতে এসি ব্যবহারের প্রয়োজন কম থাকলেও এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণকে গুরুত্ব দিন।

Tags: ,

More Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed